বাংলাদেশের সংস্কার ও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ চান জয়

বাংলাদেশের সংস্কার ও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ চান জয়
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ চান দলটির সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের প্রকৃত সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশে সেনাপ্রধান ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে কথা বলেছেন তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জয়। তিনি বলেন, যদিও এটি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দেরিতে এসেছে, তবে এই সিদ্ধান্তে আমি খুশি। উল্লেখ্য, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো শেষ করতে পারে এবং ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে সেজন্য এই সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে সেনাবাহিনী। তিনি আরও বলেছেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের বিষয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমাদের এখন অন্তত একটি প্রত্যাশিত সময় দেওয়া হয়েছে শুনে আমি খুশি। তবে আমরা এই নাটক আগেও দেখেছি, যখন একটি অসাংবিধানিক, অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং পরে পরিস্থিতি শুধু আরও খারাপই হয়।’ সাক্ষাৎকারের সময় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেন জয়। সবচেয়ে সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানটি হয়েছিল ২০০৭ সালে। সেনাবাহিনী তখন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল, যেটি দুই বছর দেশ শাসন করেছিল। এরপর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশের ক্ষমতায় বসেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট তিনি ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। রয়টার্সকে ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। কারণ সামরিক বাহিনী স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। এদিকে দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সংস্কারে কতদিন সময় লাগবে যদিও তা স্পষ্ট করেননি তিনি। বুধবার ড. ইউনূসের কার্যালয় জানিয়েছে, সরকারের গঠন করা ছয়টি সংস্কার প্যানেলের সুপারিশ পাওয়ার পরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য এবং ভোটার তালিকা তৈরি হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’ ওয়াশিংটনে বসবাসকারী সজীব ওয়াজেদ জয় এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে বৈধ সংস্কার ও নির্বাচন করা অসম্ভব। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির অনেক নেতা আত্মগোপনে আছেন। ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ নিহতের ঘটনায় মামলা হচ্ছে এবং অনেক মামলায় আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তার এমন বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোনও সাড়া পায়নি রয়টার্স। সজীব ওয়াজেদ জয় গত মাসে রয়টার্সকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা দেশে বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনা কবে দেশে ফিরতে পারেন জানতে চাইলে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘এটি তার ওপর নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে আমি আমার দলের মানুষদের নিরাপদ রাখতে চাই। তাই তাদের ওপর ইউনূস সরকারের চালানো নৃশংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়াতে চাই আমি।’

আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ

রাজনীতি

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.