সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি, জমি রেজিষ্ট্রেশনে অচলাবস্থা দূরীকরণ ও জনসাধারণের হয়রানি বন্ধে কক্সবাজার জেলার ৪৮ টি মৌজার জমি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের পূর্বানুমতি নেওয়ার আদেশ বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এর বরাবরে লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছেন কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণ ও জেলা দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাস এর হাতে পৃথক দু'টি লিখিত স্মারকলিপি দেয়া হয়।
স্থানীয় জনসাধারণ ও দলিল লেখক সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার পক্ষে উক্ত স্মারক লিপিতে বলা হয়েছে, গত ২০১২ সালের ২০ মে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান কর্তৃক সাক্ষরিত এবং জেলা প্রশাসক কক্সবাজার বরাবরে প্রেরিত পত্রের মাধ্যমে জেলার ৩৩ টি মৌজায় ও গত ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসক কক্সবাজার এর পত্রের মাধ্যমে মহেশখালী উপজেলার আরো ১৫ টি সহ মোট ৪৮ টি মৌজার জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে মর্মে জানানো হয়। এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত ওই নিয়ম চালু থাকায় ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমোদন নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল আর্থিক দেনা পাওনার মাধ্যমে অধিক কষ্টকর ও সময় সাপেক্ষে অনুমোদন/ পূর্বানুমতি নিতে হচ্ছে। ক্রয়-বিক্রয় অনুমোদন বা পূর্বানুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করায় বর্তমানে জমি ক্রেতা ও বিক্রেতাগণকে সীমাহীন দুর্ভোগ এবং হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। যথাসময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় হতে ক্রয়-বিক্রয় অনুমোদন বা পূর্বানুমতি না পাওয়ায় নিরীহ বিক্রেতাগণ নিজ ও পরিবার পরিজনের সু-চিকিৎসা, ভরণ পোষণ, বিদ্যা শিক্ষা এবং ছেলে মেয়েদের বিয়ে সংক্রান্ত সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। ভূমি নিবন্ধন অফিস সমূহ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধিন নিবন্ধন অধিদপ্তর ভুক্ত এবং ভূমি অফিস সমূহ ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধিভুক্ত হলেও ভুমি নিবন্ধন ও ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে আদেশ পরিপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে জারী করা আইনের পরিপন্থী।
স্মারক লিপিতে আরও বলা হয়, মূলতঃ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নিজেদেরকে লাভবান করার লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলায় উন্নয়নের নামে মহা-পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এস, আলম কোম্পানী ও বসুন্ধরা গ্রুপ সহ বড় বড় ভুমি খেকো এবং ভূমি দস্যুদের মহা- সুযোগ দেওয়ার জন্য উল্লেখিত ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি পত্র বা পূর্বানুমোদন প্রথা চালু করেছিল। যা বর্তমানে কক্সবাজার জেলার ৫ টি উপজেলায় উক্ত ৪৮ টি মৌজার সর্বসাধারণ এবং উক্ত মৌজা সমূহ হতে জমির ক্রেতা বিক্রেতাগণের গলায় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কক্সবাজার জেলার উক্ত ৪৮ টি মৌজা ছাড়া বাংলাদেশের কোন মৌজার জমি ক্রয়- বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা পূর্বানুমতির কোন বিধান নেই। তৎকালীন সরকার কর্তৃক কক্সবাজার জেলা নিয়ে আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে স্থানীয় জনগণকে দমিয়ে রাখার জন্য এই প্রথা চালু করা হয়েছিল। যাতে ১৫লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ ও জিম্মী হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য যে, জমি ক্রয়- বিক্রয় অনুমোদন বা পূর্বানুমতি বাতিলে স্বচেতন মহল সোচ্ছার হলে জেলা প্রশাসক কক্সবাজার স্ব-উদ্যোগে জমি ক্রয়-বিক্রয় অনুমোদন বা পূর্বানুমতি বাতিল চেয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর ২৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবরে পত্র পাঠায়। কিন্তু সরকার তা বাস্তবায়ন বা বাতিল করেনি।
বর্তমানে কক্সবাজার জেলার ওই ৪৮ টি মৌজার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম স্থবির অবস্থায় আছে। ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। তদুপরি জেলা প্রশাসক কার্যালয়, ভূমি অফিস ও রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীগণ ক্রয়-বিক্রয় অনুমতি বা পূর্বানুমতি সংক্রান্তে অনৈতিক টাকার বিনিময়ে জাল জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে স্বার্থন্বেষী মহলকে সুযোগ দিতে থাকায় সাধারণ জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উক্ত পূর্বানুমতি থেকে সরকারী ভাবে কোন রাজস্ব পায় না।
ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ক্ষেত্রে মালিকানা অনুযায়ী আংশিক ভুমির খাজানা না নিয়ে সম্পূর্ন খতিয়ানের জমির ভূমি উন্নয়ন কর দাবী করায় সরকার ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। যা সরকারী রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে দ্রুত বাতিল করা একান্ত আবশ্যক উল্লেখ করে কক্সবাজার জেলার ৪৮টি টি মৌজার জমি ক্রয়- বিক্রয়ের পূর্বানুমতির আদেশ অতিদ্রুত বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এর নিকট আকুল আবেদন জানানো হয়।