# কক্সবাজার আসছেন ২৮ আগস্ট
২০১৪ সালের ১৪ জুন। কক্সবাজারের বুকে সেদিন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। উদ্দীপনা জাগানিয়া সেই বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, 'আজকের পর হয়তো আমি আপনাদের মাঝে না-ও ফিরতে পারি! যদি আমি না ফিরি, আমি যদি নির্দেশনা না-ও দিতে পারি, আন্দোলন শুরু হলে আপনারা সবকিছু অচল করে দেবেন। সরকার বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’ সেই বক্তৃতার পর সত্যিই তিনি ফিরতে পারেননি। সরকার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৫ সালের ১০ মে রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি ভবন থেকে সাদা পোষাকধারী আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ‘গুম’ হন তিনি। দুই মাস একদিন পর ‘গুম রাজ্য’ থেকে মুক্ত হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের গলফ কোর্স ময়দানে উদ্ধার হলেও ফিরতে পারেননি নিজের মাতৃভূমিতে।
তারপর কেটে গেছে অনেকদিন, অনেক বছর। কক্সবাজার থেকে রাজধানীতে ফেরার সুদীর্ঘ ১০ বছর দুই মাস ১৪ দিন পর তিনি আবার ফিরে আসছেন নিজের জন্মভূমি কক্সবাজারে। ২৮ আগষ্ট দুপুর ১২টায় পৌঁছাবেন কক্সবাজার বিমান বন্দরে।
এ উপলক্ষে প্রস্তুতি চলছে সালাহউদ্দিন আহমদকে বরণ করার। তিনি কক্সবাজার থেকে ফিরে গিয়েছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে। এবার ফিরে আসছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘জাতীয় স্থায়ী কমিটি’র সদস্য হয়ে।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির একাধিক সুত্র জানিয়েছেন, তাদের প্রিয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে এমন ভাবে বরণ করা হবে, যেটি অনেককাল ইতিহাস হয়ে থাকবে। জেলাজুড়ে সৃষ্টি করা হবে ‘গণপ্লাবণ’। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা বিএনপি, চকরিয়া উপজেলা বিএনপি, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপি ও পেকুয়া উপজেলা বিএনপি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। দলটির এই চারটি শাখা ইতোমধ্যে প্রস্ততি সভা করেছে। গঠন করা হয়েছে শৃংখলা কমিটি। পথে পথে চলছে তোরণ নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। ব্যানার-ফেষ্টুন তো আছেই।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী জানিয়েছেন, সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে সরাসরি চলে আসবেন আগুনে পুড়ে যাওয়া বিএনপি কার্যালয় পরিদর্শনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজন জেলা বিএনপির এই ঘরটি পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, বিএনপি কার্যালয় পরিদর্শন শেষে তিনি সড়ক পথে চলে যাবেন চকরিয়ায়। সেখানে বাস টার্মিনালে রয়েছে তাঁর গণসংবর্ধনা। বেলা ২টার সেই গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন সালাহউদ্দিন আহমদ। চকরিয়া উপজেলা বিএনপি এই গণসংবর্ধনার আয়োজন করছে। তারপর তিনি যাবেন জন্মস্থান পেকুয়ায়। সেখানেও রয়েছে সংবর্ধনা। পেকুয়া উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে পেকুয়া আউটার স্টেডিয়ামে আয়োজিত সেই সংবর্ধনায়ও যোগ দেবেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপি ইউসুফ বদরী বলেন, প্রিয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে বরণ করতে জেলা শ্রমিক দল সভাপতি রফিকুল ইসলামকে আহবায়ক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট শৃংখলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। শত শত মোটর সাইকেল আর গাড়ির বহর কক্সবাজার বিমান বন্দরে সালাহউদ্দিন আহমদকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করবে। বিমান বন্দর মুখরিত হবে হাজার হাজার নেতা-কর্মী আর সাধারণ জনতার শ্লোগানে শ্লোগানে। কক্সবাজার শহর থেকে শুরু করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে চকরিয়া-পেকুয়ার পথে থাকবে শত শত তোরণ। সালাহউদ্দিন আহমদকে স্বাগত জানিয়ে করা এই তোরণের সংখ্যা এক হাজারের অধিক হতে পারে।
তিনি জানান, সালাহউদ্দিন আহমদের কক্সবাজার আগমনকে ঘিরে জেলার প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ওয়ার্ডে লাখ লাখ নারী-পুরুষ অপেক্ষায় আছেন, কখন তাদের নেতা ফিরবেন নিজের ঘরে। তাঁর এই আগমনকে ঘিরে গ্রামে-গঞ্জে চলছে মাইকিং আর নানা ধরণের প্রচারণা।
জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, এবারের সফরে সালাহউদ্দিন আহমদ সপ্তাহখানেক কক্সবাজারে অবস্থান করবেন। এই সময়ে তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাত ও কবর জিয়ারত করবেন। এছাড়াও বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার নেতা-কর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী জানান, বিএনপি সালাহউদ্দিন আহমদকে বরণে সবধরণের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ ১০ বছর তাঁর কক্সবাজার আগমনকে ঐতিহাসিক করে রাখতে বিমান বন্দরসহ সব আয়োজনে ‘গণপ্লাবণ’ সৃষ্টি করা হবে।