চকরিয়ায় ১২’শ মন লবণ লুটের অভিযোগে মামলা

চকরিয়ায় ১২’শ মন লবণ লুটের অভিযোগে মামলা
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৩০ একর আয়তনের চিংড়ি প্লটের লবণ মাঠ থেকে অস্ত্রের মুখে পরিচালক ও কর্মচারীদের জিম্মি করে ১২’শ মন লবণ লুটের অভিযোগ উঠেছে। এসময় বাঁধা দিতে গিয়ে অস্ত্রধারীদের মারধরে গুরুতর আহত হয়েছেন চিংড়ি প্লটের পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন জোসেফ (৪৮)।

এ ঘটনায় জোসেফ বাদি হয়ে গত ২ মে বৃহস্পতিবার চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি নালিশী ফৌজদারি অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী চকরিয়া উপজেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট হাবিব উদ্দিন মিন্টু। তিনি বলেন, বাদির নালিশী অভিযাগটি আমলে নিয়ে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো.জাহিদ হোসাইন দুইদিনের মধ্যে বাদির ফৌজদারি অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদি সাখাওয়াত হোসেন জোসেফ এজাহারে বলেন, চকরিয়া উপজেলার রামপুর মৌজার চিলখালীস্থ মৎস্য বিভাগের তিনটি প্লট নম্বর ৩৬৩, ৩৬৪ ও ৩৬৫ সমন্বয়ে ৩০ একর আয়তনের চিংড়ি জমি বিগত ১৯৭৭ সালে সরকার থেকে বন্দোবস্তমুলে মালিক দরবেশকাটা এলাকার এম হক ব্রার্দাস কোম্পানি। আমার বাবা মোজাম্মেল হক চৌধুরী সে সময় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। বন্দোবস্তের পর থেকে সরকারি খাজনা পরিশোধ করে উক্ত জমিতে কোম্পানির অংশিদাররা প্রতিবছর লবণ ও চিংড়ি চাষ করে আসছেন।
১৯৯৩ সালে বাবা মোজাম্মেল হক চৌধুরী মারা গেলে পরবর্তী সময়ে আমার মা খালেদা খানম এম হক ব্রার্দাস কোম্পানির চেয়ারম্যান, আমার ভাই নওশের আজগর চৌধুরী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আমি সাখাওয়াত হোসেন জোসেফ পরিচালক হিসেবে কোম্পানি আইন মেনে দায়িত্ব পালন করে প্লটটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছি।

তিনি বলেন, উক্ত চিংড়ি জমির বিপরীতে আসামিপক্ষের কোন ধরনের মালিকানা না থাকলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে চিংড়ি ও লবণ লুটপাট চালিয়ে আসছে। গত ২৯ এপ্রিল রাত আনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মজুদকৃত ১২’শ মন লবণ, ২০ হাজার টাকার মালামাল ও কর্মচারীদের খাবারের ১৫ বস্তা চাল লুট করে নিয়ে যায়। এসময় তাদের বাঁধা দিতে গেলে আমাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
সাখাওয়াত হোসেন জোসেফ অভিযোগ করে বলেন, ১৯৯৬ সালের শেষদিকে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে একটি সাজানো এভিডেভিড তৈরি করে রাতারাতি আমাদের কোম্পানির চিংড়ি প্লটের মালিক বনে যান এস্তেফাজুল হক চৌধুরী। সেই থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি লবণ ও চিংড়ি চাষের মৌসুমে সবই লুটে নিয়েছেন। ২০১৪ সালে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে চিংড়ি প্লটের ইজারা নবায়নের জন্য কোম্পানির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। চিংড়ি প্লটের ইজারা নবায়নের জন্য আবেদন জমা দিই। এটি নিশ্চিত হয়ে অবৈধ দখলবাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরী কোম্পানির চিংড়ি প্লট নিয়ে দায়িত্বশীল কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (নং ৩২৭/২০১৪) করেন। এরফলে চিংড়ি প্লটের ইজারা নবায়ন স্থগিত হয়ে যায়। টানা চারবছর মামলাটি বিচারকার্য চলার পর বাদি এস্তেফাজুল হকের মালিকানা না থাকায় এবং তার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২০১৮ সালে হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি মো. রেজাউল হাসানের একক বৈঞ্চ মামলাটি খারিজ করে দেন। সে সময় হাইকোর্টের দেওয়া খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে বাদি এস্তেফাজুল হককে ১০ সপ্তাহ সময় দিলেও তিনি আর আপীল করেননি।
সাখাওয়াত হোসেন জোসেফ বলেন, ২০১৮ সালে হাইকোর্টে নিজের মামলায় নিজে হেরে গেলেও তিনি ২০২২ পর্যন্ত উক্ত ৩০ একর আয়তনের চিংড়ি প্লটের মাছ ও লবণ লুট করে নিয়েছেন। এম হক ব্রার্দাস এন্ড কোম্পানি লি.এর অংশিদাররা গেল ২৬ বছরে আড়াই কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের সম্মুখীন হয়েছেন। গত ২৯ এপ্রিল রাতে অস্ত্রধারীদের নিয়ে হামলা চালিয়ে অপকর্মের হোতা এস্তেফাজুল হক গং লবণ মাঠে মজুতকৃত ১২’শ মন লবণ লুটে নিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য থানার এসআই মুফিজুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে এসব বিষয়ে অভিযুক্ত পক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.