কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের উত্তর মানিকপুর এলাকায় শফিউল আলম চৌকিদার ও মোহাম্মদ সেলিম নামের দুইজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশ ওই মামলার এজাহারনামীয় আসামি গ্রেফতারে অভিযান চালিয়ে আসলেও মামলার বাদি শামসুল আলম নেমেছেন সম্পূরক মামলায় আসামি করার হুমকি দিয়ে এলাকার নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার মিশনে।
অভিযোগ উঠেছে, ইতোমধ্যে বাদি শামসুল আলম তাঁর সহযোগীদের মাধ্যমে মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই রকম টাকা দাবি করে না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে দলবল নিয়ে হামলা চালিয়ে নবাব মিয়া নামের এক নিরীহ ব্যক্তির বসতঘরে হামলা তান্ডব চালিয়ে পালিত গরু ছাগল, ১০ বান্ডিল তামাক পাতা, বাড়ির চেয়ার টেবিল, খাট আলমিরা ও ফ্রিজসহ ক্রোকারিজ সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে ৭ লাখ টাকার মালামাল।
অবশ্য বসতবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের এ ঘটনায় গত ২ মে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি নালিশী মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নবাব মিয়ার মাতা ছমুদা বেগম (৬০)। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদির আইনজীবী চকরিয়া উপজেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট হাবিব উদ্দিন মিন্টু। তিনি বলেন, মামলার এজাহারে বাদি ৯ জন আসামির নামোল্লেখ করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপুর্বক প্রতিবেদন দিতে সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কে নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে মানিকপুর গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বাদি শামসুল আলম ও তাঁর সহযোগিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে এলাকায় একধরনের রামরাজত্ব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
এমনকি বাদি ও তাঁর সহযোগিরা মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে এলাকার যাকে ইচ্ছে তাকে ধরে করছেন ব্যাপক চাঁদাবাজি। চাঁদা না দিলে চালাচ্ছেন বাড়ি-ঘরে হামলা তান্ডব ও লুটপাট। এই অবস্থার কারণে অপরাধ না করেও গ্রেফতার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শতাধিক নিরীহ লোক।
মানিকপুর এলাকায় সাবেক গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ দুইব্যক্তিকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা পরবর্তী মামলা ঘিরে চলছে নিরীহ পরিবারের উপর নিপীড়ন নির্যাতনের এমন লোমহর্ষক ঘটনা।
জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল রাতে চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় মেম্বার জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল চিহ্নিত দূর্বৃত্ত স্থানীয় একটি দোকানে ঢুকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে শফিউল আলম চৌকিদার ও গেল ইউপি নির্বাচনে মেম্বার প্রতিদ্বন্দ্বী মো; সেলিমকে হত্যা করে।
এ ঘটনার পর গত ১৯ এপ্রিল নিহত শফিউল আলম চৌকিদারের ভাই সামশুল আলম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন চকরিয়া থানার এসআই মানিক কুমার।
তবে অভিযোগ উঠেছে, এজাহারভুক্ত আসামি ছাড়াও নতুন করে সম্পুরক মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে বাদি ও তাঁর সহযোগীরা এলাকার নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছে। যারা চাঁদা দিয়েছে বা দিচ্ছে তারা রেহাই পেয়েছে, চাঁদা দিতে অপরাগ ব্যক্তিরা এলাকা ছেড়েছে। যারা এলাকা ছেড়েছে তাদের বাড়ি-ঘরে নির্বিচারে ভাংচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে বাদী পক্ষের লোকজন।
মানিকপুর এলাকার মোস্তাক আহমদ সিকদারের ছেলে ভুক্তভোগি ব্যাংকার রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমি জনতা ব্যাংকে চাকুরি করি, এলাকায় থাকিনা, হত্যার শিকার যারা তাদের সাথে আমার কোন পূর্ব শত্রুতা নেই, তবু বাদী পক্ষের শাসুল আলম ও নুর মোহাম্মদ আমার কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে।
তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় সম্প্রতি আমাকেসহ ৯জনকে আসামি করে পূর্বে দায়েরকৃত হত্যা মামলায় সম্পৃক্ত করতে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্পুরক আবেদন জমা দিয়েছেন বাদি শামসুল আলম।
এদিকে হত্যা মামলার বাদীপক্ষের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৩০ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগি ব্যাংকার ওই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে। যার মামলা (সিআর নং১০৬৮/২৪)। এতে আসামী করা হয়েছে হত্যা মামলার বাদী শামসুল আলম ও মৃত ধলা মিয়ার ছেলে নুর মোহাম্মদকে। আদালতে মামলাটি তদন্তের জন্য চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ব্যাংকার রফিকুল ইসলাম দাবী করেন, গত ২১ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে বাদীপক্ষের লোক শামসুল আলম ও নুর মোহাম্মদ আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে তারা দু'জনের জন্য ৪লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদার টাকা না দিলে দায়ের করা হত্যা মামলায় অন্তুর্ভুক্ত করার হুমকি দেয়। আমি সরকারি চাকুরীজীবি, থাকি পৌরসভা এলাকায়। অপরাধ না করেও কেন চাদাঁ দিবো, এমন কথা বলে জবাব দিলে তারা চলে যায়।
একই এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় জয়নাল আবেদীন সিকদারের ছেলে নবাব মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ঘটনার সাথে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই, কিন্তু বাদী পক্ষের শামসুল আলম ও নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা আমার বসতঘরে লুটপাট চালিয়ে প্রায় ৭ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে গেছে।
এখন তাদের হুমকি ধমকির মুখে বসতঘরে যেতে পারছিনা। সন্তানদের মুখ দেখতে পারছিনা। এখন আমাকে সম্পুরক মামলায় আসামি করে দিয়েছে। আমার বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করায় নিরুপায় হয়ে শামসুল আলম ও নুর মোহাম্মদসহ লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমি চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমার মাতা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছি।
মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা ও চকরিয়া আদালতের সিনিয়র আইনজীবী আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার বাচ্চু বলেন, এই হত্যাকান্ডের ঘটনাকে পুজিঁ করে বাদীপক্ষের লোকজন এলাকায় ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করেছে।