কক্সবাজারে না থাকলেও চাঁদা দাবি ও ভাংচুর মামলার আসামি চিকিৎসক, প্রবাসি ও ব্যবসায়ী

কক্সবাজারে না থাকলেও চাঁদা দাবি ও ভাংচুর মামলার আসামি চিকিৎসক, প্রবাসি ও ব্যবসায়ী
কক্সবাজার সদর থানায় চাঁদা দাবি ও ভাংচুরের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলা নিয়ে নানা সমালোচনা ও বিরূপ প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দায়ের করা মামলাটিতে কক্সবাজারে অবস্থান না করেও আসামি করা হয়েছে চিকিৎসক, দীর্ঘদিন অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসি একজন ইঞ্জিনিয়ার, সৌদি আরবে পবিত্র ওমরা পালন করতে যাওয়া একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে।

অভিযোগ উঠেছে, কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই পুলিশ মামলাটি গোপনে নথিভূক্ত করে একজন বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক ও সার্জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এমন কি মামলা দায়েরকারি পক্ষের হয়ে পুলিশ রিমান্ডের আবেদনও করেছিল। 
ভূক্তভোগী ও তাদের স্বজনদের দাবি, মুলত একটি প্রভাবশালী চক্র এসব বিশিষ্টজনদের জমি দখল করতেই এমন মামলা এবং পুলিশ দিয়ে হয়রানী করছেন।
গত ১৩ এপ্রিল কক্সবাজার সদর থানায় এই মামলাটি নথিভূক্ত করা হয়। যার নম্বর ৪২/২৭৪। কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার ওয়েলপার্ক রিসোর্টের ঠিকানা ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকার মো. দানেজ আলী মন্ডলের ছেলে মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলার এজাহারে ঘটনার তারিখ স্থান উল্লেখ করা হয়েছে ১০ ও ১১ এপ্রিল রাতে, কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলী এলাকায়।
এজাহারে বলা হয়েছে, বাদির ক্রয়সূত্র মালিকানাধিন জমিতে ইব্রাহিম খলিল, মিজানুর রহমান, কামরুজ্জামান লিমন, মো. নুরুল কাদের ও মো. ইউসুফের নেতৃত্বে ২০/৩০ লোক গিয়ে জমির দেয়াল, ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এসময় মারধর করা হয় জমিতে পাহারায় থাকা লোকজনকে। মুলত দাবি করা দাবি করা ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ার জের ধরে জমি দখলের জন্যই এ ঘটনা সংঘটিত করা হয়। পুলিশ চাঁদাদাবি, অনাধিকার প্রবেশ, চুরি ও প্রাণনাশের হুমিকর আইনে মামলাটি লিপিবদ্ধ করেছে। যেখানে ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।
মামলাটি লিপিবদ্ধ হওয়ার পর পরই পুলিশ মামলার দুই নম্বর অভিযুক্ত মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। 
কিন্তু মামলাটির খবর জানা—জানি হওয়ার পর কক্সবাজারে নানা সমালোচনা ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই মামলাটিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো দুই নম্বর অভিযুক্ত মিজানুর রহমান একজন বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক ও সার্জন। তিনি কক্সবাজার শহরের পুরাতন শেভরণে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন। কক্সবাজারের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান মিজানুর রহমান গত ২১ বছর ধরে সুনামের সাথে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। তিনি বর্তমান ডেন্টাল সোসাইটি কক্সবাজার শাখার সহ—সভাপতি। সৈকত রোটারী ক্লাব, কক্সবাজার, বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সক্রিয় সদস্য। কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স কর্তৃক পরিচালিত হিফ্জ শাখার বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন সহ আরও নানা সামাজিক কর্মকান্ডের সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন।
এছাড়া মামলায় এক নম্বরে অভিযুক্ত ডা. ইব্রাহিম খলিল একজন দেশের বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক ও সার্জন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্বাস্থ্য বিভাগের দন্ত বিষয়ক পরামর্শক এবং ঢাকার একটি সিটি দন্ত কলেজের শিক্ষক। মামলার এজাহারে যে সময় বা তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ওই সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। 
তিনি নিজেই বলেছেন, ‘ঢাকায় ঈদের নামায আদায়, পরিবার—পরিজনকে নিয়ে সময় কাটিয়েছি। আমি নিজেই জাতীয় ঈদগাঁও মাঠে নামায আদায় সহ নানা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করেছি। কিন্তু আমাকে ঘটনার সময় কক্সবাজার উপস্থিত দেখিয়ে মানহানিকর মামলার খবরটি পেয়ে দুঃখ পেয়েছি।’
মামলায় অভিযুক্ত ৩ নম্বর কামরুজ্জামান লিমন কক্সবাজারের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। শহরের বাজারঘাটা এলাকায় তিনি ব্যবসা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। ঘটনার দিন তাকে ঘটনাস্থলে উপস্থিতির কথা বলা হলেও তিনি বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। গত ২৩ মার্চ তিনি পবিত্র ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গেছেন। মো. নুরুল কাদের একজন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি গত ২০২৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত অষ্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী।
ডা. মিজানুর রহমানের স্ত্রী ডা. ফারহানা আলম মিতু জানিয়েছেন, প্রকৃত পক্ষে সংঘটিত একটি ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে একটি ভূমিদস্যূ চক্রের সদস্যরা স্ব—স্ব পেশায় প্রতিষ্ঠিত বিশিষ্টজনদের মানহানিকর এই মামলাটি দায়ের করেছেন। রেজাউল করিম নামের যে বাদি তার জমির কথা এজাহারে উল্লেখ করেছেন তার পাশেই রয়েছে ডা. ইব্রাহিম খলিল, ডা. মিজানুর রহমান, ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান লিমন ও ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুল কাদেরের জমি ও স্থাপনা। ডা. ইব্রাহিম খলিলের জমি সমুহ তিনি ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত। তাঁর অপরাপর ভাই ও ওয়ারিশ থেকেই ডা. মিজানুর রহমান, ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান লিমন ও ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুল কাদের জমি ক্রয় করেছেন। একই ওয়ারিশ থেকে জমি ক্রয় করেন হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তি। ওই হুমায়ুন কবির থেকে জমি ক্রম করেন রিফাত হাসনাত নামের এক ব্যক্তি। তা গোপন রেখে হুমায়ুন কবির একই জমি বিক্রি করেন রেজাউল করিম এবং আবুল কালাম আজাদ নামের এই দুই ব্যক্তিকে। যেখানে আগে থেকেই সীমানা প্রচীর নির্মাণ করা ছিল। ঘটনার দিন রেজাউল করিম এবং আবুল কালাম আজাদ এসে লোকজনকে সাথে নিয়েই সীমানা প্রচীর ভেঙ্গে দেয়। এরপর রহস্যজনকভাবে দায়ের করা মামলায় ডা. মিজানুর রহমানকে আটক করেন পুলিশ। এবং পরবর্তিতে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এই বিষয়ে আদালতে নিয়ম মতে প্রক্রিয়ায় বিচারকার্য চলমান রয়েছে। মুলত রেজাউল করিম এবং আবুল কালাম আজাদ মিলেই অন্যের জমি জবর দখল করতে মোটা অংকের টাকার মিশন নিয়ে নিজেদের সৃষ্ট ঘটনা অন্যের উপর চাপিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করছেন। 
তিনি অভিযোগ করেন, কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই পুলিশ এক পক্ষের হয়ে এমন মিথ্যা মামলাটি গ্রহণ করে একজন চিকিৎসককে কারাগারে পাঠান। শুধু তা নয়, এ ধরণের একটি মামলায় পুলিশ চিকিৎসকের রিমান্ডের আবেদনও করেছিল। কিন্তু আদালত রিমান্ড দেননি। বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে মামলার বাদি রেজাউল করিম জানান, ঘটনাটি কারা সংঘটিত করেছে তা পরিষ্কার। ঘটনার পর জমিতে যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের নাম দিয়ে সাইন বোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে। কক্সবাজারে না থাকলেও এদের নিদের্শে এই ঘটনা ঘটনানো হয়েছে। যেখানে মিজানুর রহমান ও ইউসুফ নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওইভাবে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। 
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানার ওসি রকিবুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একই সঙ্গে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিদর্শক এসএম শাকিল হাসানকে ফোন করা হলেও তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.