জুতার মালা পরিয়ে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল

জুতার মালা পরিয়ে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল
কক্সবাজার শহরের গাড়ির মাঠ এলাকায় মোবাইল চুরির অপরাধে এক কিশোরকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে বৈদুতিক খুটির সাথে বেধে মারধর করা হয়। এসময় কিশোরের গায়ে লিখা দেওয়া হয় ‘মোবাইল চোর আমি’। আর এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়।

বিষয়টিকে অমানবিক বলছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। তাকে পুলিশে দেওয়া যেতো। কিন্তু এই ধরণের প্রকাশ্যে মানক্ষুন্ন করে ছবি-ভিডিও ফেসবুকে দেওয়া উচিৎ হয়নি। এতে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। এই ধরনের অপমান অনেকে সহ্য করতে না পেরে বড় ধরণের অঘটন করে ফেলতে পারে। তখন এর দায়ভার কে নেবে? যারা এই অমানবিক কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।
এ ব্যাপারে পুলিশ বলছে, সংগঠিত অপরাধের জন্য আইন রয়েছে। শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু একজন মানুষের মানক্ষুন্ন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়ার অধিকার কারো নেই। এই অপরাধের জন্য ডিজিটাল আইনে মামলার ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের গাড়ির মাঠের হিন্দু পাড়া এলাকায় সুনীল দাশের ছেলে ঝুলন দাশের মোবাইল চুরি হয়। পরে সিসিটিভি’র ফুটেজের মাধ্যমে মঙ্গলবার চোর সন্দেহে এক কিশোরকে আটক করে। আটক হওয়া কিশোরকে প্রথমে ঝুলন দাশের ঘরে শিকল দিয়ে বেধে মারধর করা হয়। ওই সময় কিশোরটি স্বীকার করে মোবাইল চুরির ঘটনা। দেড়হাজার টাকায় মোবাইলটি বিক্রি করে দেয় এক দোকানদারকে। এরপর ওই কিশোরকে রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে খালী গায়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে বৈদ্যুতিক খুটির সাথে বেধে মারধর করা হয়। ওইসময় তার গায়ে লিখে দেওয়া হয়া ‘মোবাইল চোর আমি’। আর এই দৃশ্যগুলো ছেড়ে দেওয়া হয় ঝুলন দাশের ফেসবুকে। পরে চুরি যাওয়া মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

এ ব্যাপারে ঝুলন দাশ জানান, এই চুর থেকে সবাইকে সচেতন করার জন্য ভিডিও ও ছবি ফেসবুকে দেওয়া হয়েছে। এতে করে সবাই এই চোর থেকে সাবধান হতে পারবে।
বিষয়টিকে বাড়াবাড়ি এবং অমানবিক বলছেন সচেতন মহল।
শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন এর কমকর্তা তাসলিমা আক্তার জানান, এই বিষয়টি খুবই অমানবিক। একজন মানুষের অপরাধের জন্য শাস্তি হতে পারে। কিন্তু এভাবে অপমানজনক দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়াটা কোনভাবেই উচিৎ হয়নি। এতে তার আগামী ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এতে অনেক সময় ডিপ্রেশনে চলে যায় সম্ভাবনাময়ী একজন মানুষ।
নুরুল ইসলাম নামে এক মসজিদের ইমাম জানান, অপরাধ হতেই পরে। মানুষ পরিবর্তনশীল। অনেক খারাপ মানুষও ভাল হয়ে যায়। কিন্তু এভাবে ফেসবুকে দিয়ে সারা দুনিয়ার কাছে মানুষটিকে ছোট করে মানহানী করতে পারেনা। এই ঘটনা সারা জীবনের জন্য কাল হয়ে থাকবে। এসবের কারণে অনেক সময় ভাল হওয়ার সুযোগ থাকেনা।
কলেজ শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, এই অপরাধের জন্য কিশোরটিকে পুলিশে দেওয়া যেত। তা না করে যারা এই ধরণের জঘন্য কাজ করেছে তাদের রিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। এসব ঘটনার ফলে অনেক সময় অপমান সহ্য করতে না পেরে মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। তখন এর দায়ভার কে নেবে? একটা ঘটনার জন্য একটা মানুষের জীবন এভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার কোন অর্থ হয়না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সেলিম উদ্দিন জানান, অপরাধের জন্য আইন আছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এভাবে ছবি-ভিডিও দিয়ে কাউকে মানক্ষুন্ন করার অধিকার কারো নেই। অভিযোগ করলে ডিজিটাল আইনে মামলা হবে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.