মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্র বন্দরে বদলে যেতে পারে উপকূলের দৃশ্যপট। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে অস্বস্থি থাকলেও গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কারণে স্বস্থি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মহেশখালী দ্বীপ দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। এছাড়া উপকূলের সাথে স্থাপিত হবে পরিকল্পিত সংযোগ।
কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সকল আলোচনা ও সমালোচনা ছাপিয়ে এখন আলোচনার শীর্ষে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর। ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি সীমান্তবর্তী এলাকায় নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ১৮.৫ মিটার গভীরতার বন্দর নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা।
এদিকে মাতারবাড়ীতে নিমার্ণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দরের কারণে স্থানীয় লোকজনের মাঝে ভীতি কিছুটা কমেছে। কয়লা বিদ্যুৎ নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার এখন আমলেই নিচ্ছে না সাধারণ মানুষ। নিজেদের যা সহায় সম্পদ আছে তা গুছিয়ে রাখতেই কেবল ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই দ্বীপ হবে চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ এলাকা। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। সবকিছুতেই আসবে পরিবর্তন। তবে সরকার টেকনিক্যাল কলেজসহ যে সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন হলে মানুষ আরো আশান্বিত হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক মহেশখালীর বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্র বন্দর এখনো কল্পনার মধ্যে রয়েছে। এটি বাস্তবে রুপ নিলে পুরো উপকুলের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। পুরো এলাকাই একটি অত্যাধুনিক শহরে পরিণত হবে। তখন মানুষের চিন্তা-চেতরার পরিবর্তন হবে। সরকার এই প্রকল্পটি মহেশখালী দ্বীপে স্থাপন করায় কক্সবাজার জেলায় এর বিস্তর প্রভাব পড়বে। প্রকল্পের স্বার্থেই এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে সরকার। যা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
কালারমারছড়া এলাকার বদিউল আলম জানান, আমরা অপপ্রচারে আর বিভ্রান্ত হচ্ছি না। গভীর সমুদ্র বন্দরই ভাগ্য বদলে যাবে মহেশাখালীর মানুষের। আমাদের মাঝে আর আতংক নেই, সবাই এখন গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে আশাবাদি। আগামী প্রজন্ম এই প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি ভোগ করবে। যারা এতদিন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিভ্রান্তিতে ছিলেন তারা সবাই আশাবাদি।
মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রকল্প পরিচালক জাফর আলম বলেন, ২০২৬ সালে বন্দরের প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে আমাদের অধিকার আরো বেশি শক্তিশালি হবে। সুনীল অর্থনীতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে মাতারবাড়ী বন্দর নতুন উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে মাতারবাড়ী বন্দরে ১৮.৫ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে এবং প্রায় ৮ হাজার টিইইউ’স কন্টেইনার (বিশ ফুট দৈর্ঘের কন্টেইনার) নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে মাতারবাড়ী বন্দরে। ফলে সামগ্রিক পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে আনুমানিক ১৫ শতাংশ। মাতারবাড়ী বন্দর সড়ক, রেল ও নদীপথ দিয়ে সংযুক্ত থাকবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে একটি সুপরিকল্পিত কানেক্টিভিটি গড়ে উঠবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে পরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে। সমুদ্র সম্পদ ও বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মাতারবাড়ী বন্দর সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। মাতারবাড়ী বন্দরের বাস্তবায়ন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।